এবার আইনা চলে, ঘুমটা ফেলে, নয়ন ভরে দেখ, ও তুই নয়ন ভরে দেখ, ও তুই সরল হয়েই থাক’। লালনের গানের এ মর্মবানী বলেই দেয় যে বাউলরা, সাধু সহজ ও সরল পথের সন্ধান করেন। আর সরল জীবন-যাপন করেন। আর তাই লালন অনুসারীদের মতে সহজ ও সরল পথের তালাশ করলেই সহজ মানুষ হওয়া যায়। তাইতো এ পথের সন্ধানে অনেকেই সংসারত্যাগী হন। হাজারো বাউল, সাধু, ফকির আর দর্শার্থীরা পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার মরা কালিনদীর পাড়ে লালন আঁখড়া বাড়ি। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৯তম তিরোধনা দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তিনদিনের উৎসব। জেলা প্রশাসন, লালন একাডেমী ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী চলবে উৎসব ও গ্রামীণ
ছেঁউড়িয়া গ্রামে মরাকালি নদীর পাড়ে বিশাল মাঠে পা ফেলার মত জায়গা নেই। হাজারো বাউল, সাধু আর ফকিরের পদচারনায় মুখর লালন আঁখড়াবাড়ি। লালনের মাজার প্রাঙ্গণ ছাড়াও সামনের বিশাল প্রান্তরে আসন গেড়েছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা লালন ভক্তরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পুরো লালন বাড়ি বাউল, সাধু আর ফকিরদের দখলে। পাশাপাশি অসংখ্য দর্শনার্থী মিলেছেন তাদের সাথে। লালন মাজার সংলগ্ন একাডমেীর নিচেই প্রবীণ বাউলের জমজমাট আড্ডা। এছাড়া মাজারের সাথে মাঠেও জড়ো হয়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বাউল সাধুরা। প্রবীণ থেকে শুরু করে নানা বয়সী বাউলের দেখা মেলে মাজারে।
হুমায়ন জানান, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। তাইতো মানুষের মাঝে লালন ফকির কোন ভেদাভেদ দেখেননি, তিনি সকলকে ভাল বাসতেন। মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিকুলতে ভালবাসতে বলেছেন, সবার পাশে তিনি দাঁড়াতে বলেছেন। তাই মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই যদি এ মনোভাব নিয়ে চলতো তাহলে সব হানাহানি, মারামারি ও হিংসা বন্ধ হয়ে যেত।’ লালনের এ উৎসব ঘিরে নানা কিসিমের লোকজনের আগাগোনা বাড়ে মাজার আঙ্গিনায়। অনেকে এক সপ্তাহ আগে চলে আসে। কোন দাওয়াত দেয়া লাগে না।
আমজাদ বলেন, কিসের দাওয়াত, আমাদের কোন দাওয়াত লাগে না। দাওয়াত তো মনের ভিতর গেঁথে আছে। ৩০ বছর ধরে আসছি। তাইতো মনের টানেই চলে আসি।এখানে আসলে ভাল লাগে বলে জানান তিনি।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, একাডেমীর নিচে গোল হয়ে খন্ড খন্ড বসে গানের মজমা বসিয়েছেন বাউলরা। সুর তুলেছে বাদ্যযন্ত্রে। একজন বাউল গান ধরে। দু’একটি গান শেষ করার পর পাশে বসা অন্য বাউলরা গান ধরেন। এভাবেই চলে রাতদিন। দর্শনার্থীরাও পাশে বসে গোল গানে মজে থাকেন। সবার কন্ঠেই লালনের গান। শব্দে স্পষ্ট বোঝা যায় না। মাথা দুলিয়ে নেচে গেয়ে নানা অঙ্গভঙ্গিতে আনন্দ প্রকাশ করে একাকার সাধুরা।
লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে আয়োজনের কমতি নেই। বাউল থাকা ও খাওয়ার জন্য সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।