ভেড়ামারা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গোলজার হোসেন কলা চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে। নদীর চরের বুকে কলাবাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। পরিত্যাক্ত বালুচর এখন কলা বাগান নামেই বেশ পরিচিত। গোলজারের মত ভেড়ামারা উপজেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ কৃষকরা কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এর ফলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে তাদের। অর্থকরী ফসল হিসাবে কলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই উপজেলার মাটি দোআঁশ ও বেলে দোঁআশ হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে ধান আবাদকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। কৃষকরা এখন পুরাতন ধ্যান ধারনা পাল্টে লাভজনক ফসল হিসাবে কলা চাষের উপর ঝুঁকে পড়ছে। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের অন্তর্গত মৃত ছামসুদ্দিন এর পুত্র গোলজার হোসেন। যেখানে অন্যান্য ফসল করে লাভবান হতে পারছে না স্থানীয় চাষিরা, সেখানে কলা চাষ সফলতার হাসি এনেছে এ উপজেলার চাষিদের মুখে তিনি। ফলে দিন দিন বাড়ছে কলা বাগানের সংখ্যা। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষি। একরের পর একর কলা বাগান করে বছর শেষে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারায় স্থানীয় অনেক যুবকও পেশা বদলাচ্ছেন। অন্য পেশা ছেড়ে আসছেন কলা চাষে। গত বছর কলার দামে খুশি না হলেও এবার কলার দামে চাষি-ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। দারিদ্র্যতার কারনে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি গোলজার। বাল্য বয়সেই পিতার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন তিনি। বাল্য বয়েসে পিতাকে হারিয়ে পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। নিজ জমি না থাকায় বর্গা নিয়ে আবাদ শুরু করেন তিনি। বাড়ির পার্শ্ববর্তী একজনের সহযোগিতায় মালদ্বীপ চলে যান। মালদ্বীপ থাকাকালীন কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেন। মালদ্বীপ হতে ফিরে নিজ জমিতে ফল চাষ শুরু করেন। কিছু জমি কলা আবাদ করেন। কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। নিজ উপজেলা ভেড়ামারা বাদে ও তিনি বর্তমানে পাশ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলার দাদাপুর চরে প্রায় ৩৮০বিঘা জমি কলার আবাদ রয়েছে। চরটি পতিত ছিল কোন ফসলই আবাদ হতনা। এখানে জমির খাজনা কম হওয়ার তিনি জমি লিজ নিয়ে কলার আবাদ শুরু করেন। তাঁর কলা আবাদে সফলতা দেখে অনেকে কলা সহ অন্যান্য ফসল আবাদ করেছেন এবং লাভবান হয়েছেন।
গোলজারের কারনে আজ চর ও চরের মানুষ স্বাবলম্বি এবং বর্তমানে জমির মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান ১বিঘা জমিতে কলা আবাদে ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ৮০-৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ৪০-৪৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। বিগত ৪ বছরে কলা আবাদ হতে খরচ বাদে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা আয় করেছেন তিনি। বর্তমানে নিয়মিত ও খন্ডকালীন দৈনিক প্রায় ২৫-৩০ পরিবার তাঁর অধীনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে গোলজার হোসেন তাঁর জীবনের স্বপ্নময় সময় অতিবাহিত করছেন। কলা চাষ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। পারিবারিক স্বচ্ছতালতা সহ সমাজে একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত লাভ করেছেন। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সদস্য সহ বিভিনś সামাজিক উন্নয়ন কাজে তাঁর অবদান এলাকায় নজর কেড়েছে সবার। বর্তমানে তিনি মোকারিমপুর ইউনিয়নের কৃষক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি অবহেলিত কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছেন। সরেজমিনে উপজেলার বিভিনś এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃত জমিতে কলার বাগান। পরিচর্যায় ব্যস্ত বাগানের মালিক-শ্রমিকরা। চাষযোগ্য জমির পাশাপাশি পতিত জমিতে করা হয়েছে অসংখ্য বাগান। আর কলা চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন চাষিরা। ফলে অন্যের জমি বর্গা নিয়েও অনেকে কলা বাগান করছেন। আবার অনেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশের পতিত জমিতেও বাগান করছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয় কলা চাষে। ফলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলা চাষ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে জাত ভেদে সাড়ে ৩ শ থেকে ৪ শ কলার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। যত্নসহকারে কলা চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ পড়লেও প্রতিবিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়। তা ছাড়া কলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা হয় না। পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায়।