এমন একটি নির্বাচন আমরা প্রত্যক্ষ করলাম যেখানে কেউ কারো ভোট দিয়ে দিতে পারেনা , মৃত্যু লোক ও এসে ভোট দিয়ে যেতে দেখা যাইনা , যেখানে আগের রাতে ভোট হয়ে যাবার ও কোন প্রশ্ন বা সংশয় থাকেনা । ৫০ টা স্টেট বলা যায় ৫০ টা বাংলাদেশের সমান বা বড় , যেখানে ভোটে একজন লোক মারা যায়নি , কেন্দ্র দখল হয়নি , পক্ষ বিপক্ষে কোন ধাওয়া পাল্টা হয়নি , ভোট না দেওয়ায় ধর্ষন হয়নি , ব্যালট বক্স ছিনতাই হয়নি , যেখানে পোল ওয়ার্কার ছাড়া কোন দলের আলাদা ভাবে এজেন্ট থাকেনা !
এমনই সভ্য ও সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক দেশ আমেরিকা । এমন দেশটির মতো যদি আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ হত বুকটা আরো গর্বে ভরে যেত ।
আমি এবার একটি কেন্দ্রে পোল ওয়ার্কার হিসেবে ভোটের দায়িত্বে থেকে খুবই কাছে থেকে ভোট গ্রহন পদ্ধতি দেখেছি ।সেখানে দুই নাম্বারী করার কোন উপায় দেখিনি । প্রত্যেক টেবিলে দুইজন করে দায়িত্ব পালন করা হয় একজন ডেমোক্রেটিক ও অন্যজন রিপাবলিকান রেজিস্ট্রেশন ওয়ার্কার । এখানে কেউ কাউকে বলতে পারবে না ওমক কে ভোট দেন ।যারা ভোট দিতে জানেন না তাদের দেখিয়ে দিতেও দুইজন পাশে থাকবে ।
কেউ ভোট দিতে আসলে একবার হয়ে গেলে ভোটেড লেখা থাকবে ২য় বার ভোট দিতে পারবে না ।এখানে এবার মেইলিং ভোট , আর্লি ভোট ও অ্যাবসেন্চ ব্যালটেও যথেস্ট ভোট দিয়েছেন । যেগুলোর গণনা করতে একটু সময় লাগলেও যাদের সময় নেই ভোট সেন্টারে গিয়ে ভোট দেওয়া তাদের জন্য এটা খুবই ভাল হয়েছে ।
ভোটের কেন্দ্র আমার বাড়ির সাথেই ভোট সেন্টারে আমি ডিউটির জন্য ৫টায় গিয়ে দেখি লোকজন লাইন শুরু করে দিয়েছে অথচ ভোট শুরু সকাল ৬টা থেকে । ভোর ৬টায় কেন্দ্রের বাহিরে দেখলাম ৬ফুট দূরুত্ব বজায় রেখে বিশাল বড় লাইনে ভোটারগণ অপেক্ষা করছেন । সত্যি এমন বিশাল বড় লাইনে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে জাকজোমকপূর্ণ পরিবশে কখনো জনগনকে ভোট দিতে দেখা যায়নি ।
কেউ মেইলিং ভোট করে থাকলে আগে যদি কেউ কেন্দ্র গিয়ে ভোট দিয়ে থাকে সেটাও দেখা যাবে সে ভোটদান করেছেন কিনা ।যদি দিয়ে থাকে কম্পিউটার বলে দিবে ভোটেড তখন আর ২য় ভোটটি গ্রহন করা হবেনা ।
এছাড়া একটু ভূল হলে , যেমন যেখানে একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে বলা হয়েছে সেখানে দুই জনকে দিলেও স্ক্যানিং হবেনা ।আবার নতুন ব্যালট নিয়ে ভোট দিতে হবে , এভাবে একজন সর্বোচ্চ ৩ব্যালটি পেতে পারে ভূল করলে । ৩য় বার ভূল করলে সে আর ভোট দিতে পারবে না ।
এছাড়া ডিস অ্যাবিলিটি ব্যক্তির জন্য বিশেষ মেশিনে ভোট দেবার ব্যবস্থাও আছে ।
সত্যি অসাধারণ সব প্রযুক্তি , ভোট দিতে আসলে নাম অথবা ভোটারদের বার কোর্ড ব্যবহার করে সহজেই আইপেডে তথ্য চলে আসে ।
এবার যে বাইডেন জয় পাবে সেটা ডিমোক্রাটিকদের অগ্রীম ভোট দেওয়া দেখে ও সকালে যারা ভোট দিতে এসেছে তার বেশির ভাগই ডিমোক্রাটিক দলের তখনই বুঝতে পেরেছি এদেশের জনগন আর ট্রাম্পকে চাই না , তারা পরিবর্তন চাই । ট্রাম্প থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেবার বড় কারণ কোভিড ১৯ এ আড়াই লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন , এছাড়াও ইমিগ্রেন্ট ও মুসলিমদের জন্য খুবই কঠোর অবস্থায় ছিলেন ।
ভোটের পরে এতো টানটান উত্তেজনা কে জিতবে ঠিক বলা যাচ্ছিলো না এত কম ব্যবধানে সুয়িং স্টেটগুলোর রেজাল্ট হয়েছে । তবে মেইলিং ভোটের ব্যবধানই বাইডেনের জয়ের পাল্লা ভারী করে দিয়েছে ।
সারা বিশ্বের দীর্ঘ এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর জো বাইডেন তার জন্মভূমি পেনসিলভেনিয়ার জয় দিয়েই জয় পেয়ে গেলেন ।
বিশেষ করে বাইডেনের এই জয় করোনাতে মারা যাবার প্রত্যেক পরিবারের , এই জয় ইমিগ্রেন্টেদের .. এই জয় মুসলিমদের , এই জয় সকল আমেরিকার নাগরিকদের ।
গড ব্লেশ আমেরিকা । অভিনন্দন জো বাইডেন । শুভ কামনা রইল ।
মো: আসাদুজ্জামান
নিউইয়র্ক থেকে ।